মোঃ মোজদার হোসেনউপজেলা কৃষি অফিসার, নাটোর সদর,নাটোর। ভূমিকাঃ-সজিনা একটি অতি পরিচিত দামী ও সুস্বাদু সব্জী। সজিনার উপর দেশে বিদেশে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা ব্যাপক গবেষণা অন্তে একে ‘‘ অলৌকিক বৃক্ষ’’ এবং ‘‘ পুষ্টির ডিনামাইট’’ বলে অভিহিত করেছেন। গোটা আফ্রিকা মহাদেশ, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা ভারত,মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে সজিনার চাষ বেশী হয়। সজিনা সব্জির চেয়ে এর পাতার উপকার আরও বেশী । দক্ষিণ আফ্রিকায় এই গাছকে মায়েদের ‘‘ উত্তম বন্ধু’’ বলে সজিনার বিভিন্নমুখী ব্যবহারকে অপরিহার্য মনে করা হয়। আমেরিকার ‘‘চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস’’,‘‘এডুকেশনাল কনসার্মস ফর হাঙ্গার অর্গানইজেশন’’ ইত্যাদি বেসরকারী সংগঠন সজিনাকে ‘‘জীবন বৃক্ষ এবং পুষ্টির এক অনন্য সহজলভ্য উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং এর ব্যাপক ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করেন। ভারতীয় আয়ুর্বেদ শ্বাস্ত্র মতে সজিনা ৩০০ প্রকার ব্যধির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় প্রায় সবগুলি এমাইনো এসিড সজিনা পাতায় বিদ্যমান বলে বিজ্ঞানীরা একে‘‘ পুষ্টির ডিনামাইট’’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । সজিনা পাতার গুনাগুনঃ-সজিনা পাতা সেবনে মায়েদের সত্মন্যদানকালে বুকের দুধ নিঃসরণ বেশী হয়, পুরম্নষের যৌনশক্তি বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী করে, মেয়েদের বিলুপ্ত যৌন বাসনাকে উজ্জীবিত ও দীর্ঘায়িত করে। এক টেবিল চামচ সজিনা পাতার গুঁড়ো থেকে ১ হতে ২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যাশ্যকীয় ১৪% প্রোটিন,৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ ও ভিটামিন এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম। সজিনার বীজ থেকে ৩৮-৪০ % ভোজ্য তেল পাওয়া যায় যাতে উচ্চ মাত্রার বিহ্যানিক এসিড থাকে যা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক। এই তেলের কোন গন্ধ নাই এবং অন্য যে কোন ভোজ্য তেলের মতই মানসম্পন্ন । তেল নিষ্কাশনের পর প্রাপ্ত খইল সার হিসেবে এবং পানি শোধনের কাজেও ব্যবহৃত হয় । আফ্রিকার তানজানিয়ায় সরকারী ভাবে ছোট শিশুদের জন্য প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে সজিনা পাতা খাওয়ানোর জন্য জরম্নরী নির্দেশ জারী করা আছে। গত ২০/১১/২০০৭ তারিখে বিজ্ঞানী প্যাট্টি ডোনোভোন এর ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি উলেখ করেন যে, সম পরিমান সজিনা পাতায় কমলালেবুর চেয়ে ৭ গুন ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে ৪ গুন ক্যালসিয়াম এবং ২ গুন প্রোটিন, গাজরের চেয়ে ৪ গুন ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে ৩ গুন পটাশিয়াম বেশী বিদ্যমান রয়েছে। তিনি আরো উলেস্নখ করেন যে, সজিনা পাতায় ৪২% প্রোটিন ,১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাসিয়াম ,৭১ % লৌহ, ২৭২% ভিটামিন এ এবং ২২% ভিটামিন সি সহ দেহের আবশ্যকীয় অনেক পুষ্টি উপাদান আছে। এ জন্য আফ্রিকায় একে ‘‘ পুষ্টির ডিনামাইট ’’ বলে অভিহিত করা হয়। ওষুধি গুনঃ- সজিনা পাতা প্রায় ৩০০ প্রকার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। সজিনার কোন অংশই ফেলনা নয় । এর ছাল , শিকড় , ফুল, ফল ও বীজ ও তেল বিভিন্ন দেশে ঐতিহ্যবাহী ও এন্টিসেপটিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে ও বিভিন্ন প্রকার বাত ব্যাধি ও যৌন ব্যাধির নিরাময়ক এবং টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে বিজ্ঞানীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
আপনি আরও পড়তে পারেন
-
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া কেন জরুরি
গর্ভাবস্থায় আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ তখন নিজের সঙ্গে সঙ্গে আরও একজনের দায়িত্ব নিতে হয়।... -
চিনি খাওয়ার অপকারিতা
চিনি ছাড়া একটি দিনও চলা মুশকিল। প্রতিদিনের চা কিংবা কফি, বাড়িতে অতিথি এলে তার আপ্যায়নে শরবত... -
কোন আঙুর বেশি উপকারী,কালো না সবুজ
ভীষণ সুস্বাদু ফল আঙুর। টসটসে রসালো এই ফল খেতে পছন্দ করেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া...